কথাশিল্পী শওকত ওসমান
‘জাতির কথাশিল্পী’। হুমায়ুন আজাদ লিখেছিলেন ‘অগ্রবর্তী আধুনিক মানুষ’। বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে একপ্রকার বিপ্লব ঘটিয়েছেন তিনি। মুক্তবাক আর সমাজের চলতি ধারাকে উঠিয়ে এনেছেন সাহিত্যে। নিজেকে তিনি পরিচয় দিতেন ‘ঝাড়ুদার’ বলে, সমাজের ঝাড়ুদার। সমাজের সব জঞ্জাল, অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার। তাঁর আধুনিক আর বাস্তবধর্মী লেখনি সমাজের কথা বলতো। তিনি নির্দ্বিধায় বলতেন সত্য আর সুন্দরের কথা। তাকে কেবল সাহিত্যিক হিসেবে পরিচয় দিলেই হবে না, বলা যায় পূর্ণ সমাজ সংস্কারক। প্রথম জীবনে তাকে দারিদ্র্যতার সঙ্গে সংগ্রাম করে উঠে আসতে হয়েছিল। তিনি কিংবদন্তী সাহিত্যিক শওকত ওসমান।
জীবনী
রুশ বিপ্লবের বছর ১৯১৭-এর ২ জানুয়ারি পশ্চিম বঙ্গের হুগলী জেলার সবল সিংহপুর গ্রামে জন্ম বাঙালি কথাকার শওকত ওসমানের। দেশভাগ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্রের সংগ্রাম ইত্যাদি অভিজ্ঞতার আভায় স্নাত তাঁর জীবন ও সাহিত্য। ‘শেখ আজিজুর রহমান’-এর ‘শওকত ওসমান’ হিসেবে আবিভূর্ত হওয়া, পশ্চিমবঙ্গের হুগলীর সবলসিংহপুরের সন্তানের কলকাতার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষালাভ ও শিক্ষকতা, কলকাতার ইনস্টিটিউট অব কমার্সে বাংলা চলচ্চিত্রের স্বনামধন্য অভিনেতা উত্তমকুমারকে কিছুকাল ছাত্র হিসেবে পাওয়া, দেশভাগের পর চট্টগ্রাম ও ঢাকায় আগমন, কর্মমুখরতা—এসবই তাঁর বিচিত্র-বর্ণাঢ্য জীবনের একেকটি স্মারক। সাহিত্যজীবনের প্রারম্ভিক পর্বে কবিতা, গল্প ও শিশুসাহিত্যে সক্রিয় হলেও ক্রমেই বিশাল বাংলার ভূগোল ও জনজীবন ভাস্বর করতে শুরু করেন উপন্যাসের অবয়বে। ‘ওটেন সাহেবের বাংলো’ নামের শিশু–কিশোর বই দিয়ে গ্রন্থকার যাত্রা শুরু।
গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, অনুবাদ, নাটক, দিনলিপি, স্মৃতিকথা, আত্মজীবনী ইত্যাদি মিলিয়ে বিপুল গ্রন্থের প্রণেতা হয়েও নিজেকে তিনি বলতেন ‘ঝাড়ুদার গ্রন্থকার’, কারণ তাঁর আমৃত্যু ব্রত ছিল সাহিত্যসাধনার মধ্য দিয়ে ‘এই ক্লিষ্ট দুনিয়ার/ সব ময়লা করব সাফ’। তাঁর ‘ক্রীতদাসের হাসি’ (১৯৬২) উপন্যাসের শেষাংশে তাতারীর সংলাপ, ‘দীরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস গোলাম কেনা চলে। কিন্তু-কিন্তু-ক্রীতদাসের হাসি-না-না-না-না-।’ যেন যেকোনো রুদ্ধ-বাস্তবে চিরকালের স্বাধীন মানবাত্মার সংলাপ। ‘মৌন নয়’ গল্প বা ‘আর্তনাদ’ উপন্যাসের মধ্য দিয়ে ভাষাসংগ্রাম আর ‘নেকড়ে অরণ্য’, ‘জাহান্নাম হইতে বিদায়’, ‘দুই সৈনিক’ উপন্যাসগুচ্ছের মধ্য দিয়ে একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামকে নতুন ব্যঞ্জনায় উদ্ভাসিত করেছেন তিনি। শওকত ওসমানের ‘জননী’ (১৯৬৮) উপন্যাস প্রকাশিত হলে সাংবাদিক-সাহিত্যিক সন্তোষ গুপ্ত তাঁকে ‘বাংলার গোর্কি’ অভিধায় আখ্যায়িত করেন। কারণ ম্যাক্সিম গোর্কি ও শওকত ওসমান দুজনের লেখাতেই প্রাধান্য পেয়েছে দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের জীবনের বর্ণনা। শওকত ওসমান প্রায়ই আক্ষেপ করে বলতেন, ‘আমেরিকানরা যখন রকেটে চড়ে চন্দ্রপৃষ্ঠে পা দিয়েছে, তখনো আমাদের দেশের গরিব রিকশাচালক ভারবাহী পশুর ন্যায় অন্য মানুষকে কাঁধে বয়ে বেড়াচ্ছে। তারপরেও আমাদের চৈতন্যোদয় হলো না।’ আর ইতালির প্রখ্যাত মার্ক্সবাদী আস্তানিও গ্রাসামির কথা ধার করে বলতেন, ‘পুরাতন মৃত্যুর পথে নতুন প্রচণ্ড প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে জন্মলাভের জন্য কঠিন লড়াইয়ে লিপ্ত। এই ক্রান্তিকালে দেশে নানা কিসিমের রোগ বিকারগ্রস্ত আলামতের প্রাদুর্ভাব ঘটে।’ পুরো জীবনী
সাহিত্যকর্ম
উপন্যাস
শওকত ওসমানের প্রথম উপন্যাস বণী আদম প্রকাশিত হয় ১৯৪৩ সালে। পরবর্তীতে তাঁর নামে আরো ১৫টি উপন্যাস প্রকাশিত হয়। বণী আদম, জননী, ক্রীতদাসের হাসি তাঁর অন্যতম জনপ্রিয় উপন্যাস। জীবনের ছোট ছোট সংঘর্ষ থেকে যে বড় পরিবর্তন আসতে পারে তা তাঁর লেখায় স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছেন।
উপন্যাস সমূহগল্পগ্রন্থ
শওকত ওসমানের গল্পগ্রন্থ সর্বমোট ১৫টি। ১৯৫০ সালে পিজরাপোল শিরোনামে প্রকাশ পেয়েছিলো তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ। গল্পের ছলে জটিল বিষয়গুলো উপস্থাপনের এক অদ্ভুত নিজস্বতা তাঁর লেখায় খুঁজে পাওয়া যায়। হস্তারক, নেত্রপথ ইত্যাদি তাঁর জনপ্রিয় গল্পগ্রন্থ।
গল্পগ্রন্থ সমূহশিশুসাহিত্য
“ওটেন সাহেবের বাংলো” শওকত ওসমানের প্রথম প্রকাশিত শিশুসাহিত্য। এরপর আরো ১১টি শিশু-কিশোর সাহিত্য রচনা করেছেন তিনি। বিভিন্ন ধারার সাহিত্য সমান দক্ষতার সাথে তুলে ধরার এক অনন্য পরিচয় নিয়ে তিনি শিশু-কিশোরদের মাঝেও বেশ জনপ্রিয়।
শিশুসাহিত্য সমূহপরিবারবর্গ
আপনার বার্তা
কথাশিল্পী শওকত ওসমান ও তার লেখা নিয়ে আপনার বার্তা ও অনুভূতি পাঠিয়ে দিন